‘গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ’—সারস্বত জ্ঞানসাধনার মুক্ত প্রতিষ্ঠান। অ-প্রথামাফিক জ্ঞানচর্চাকে নিয়মিত সাধনায় সমাজ উৎকর্ষের পরিসরকে সক্রিয় রাখা। আজকের পৃথিবীতে চলছে তথ্যের বিস্ফোরণ, দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে জ্ঞানভাণ্ডারের সুবিস্তৃত সীমানা। মানুষের সৃষ্ট এই বিদ্যাচর্চা প্রয়াস আজ মানব সমাজকে করেছে অনেক অনেক সুরক্ষিত ও নিয়মানুগ।
মানুষ যে পৃথিবী নামক গ্রহে বাস করে তাকে ঘিরে রয়েছে অসীম অনন্ত বিস্তৃত মহাকাশ তথা ব্রহ্মাণ্ড। কোটি কোটি অগুনতি নীহারিকা—গ্যালাক্সির অতীব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিসরে রয়েছে আমাদের সৌরজগৎ। তারও অতি সামান্য ক্ষুদ্রতম এক দেশকালের বিন্দুবৎ স্থানে রয়েছে এই নীল গ্রহ, যেখানে রয়েছে প্রাণের বিকাশ, মহাসাগর ও বিশালাকায় পর্বতরাজি। রয়েছে উদ্ভিদজগৎ, প্রাণীজগৎ ও বায়ুমণ্ডল। তারই এক অতি ক্ষুদ্র ভগ্নাংশের শরিক বর্তমান ‘মানব’ নামক প্রজাতি, যে কিনা পৃথিবী নামক আস্তানার মহামাতব্বর।
যুগ-যুগান্তরের সেই মানুষের সৃষ্ট সাধনার বিচিত্র ধারায় অভিষিক্ত হয়ে আমরাও হতে চাই এই সভ্যতার সংরক্ষণের এক অতি ক্ষুদ্র রক্ষক। গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদের অন্যতম প্রধান কর্মপ্রয়াসের অভিমুখ হল—গ্রন্থাগার ভাবনাকে কার্যকর করা। ১৯৬৭ সাল থেকে গোবরডাঙায় বিজ্ঞানক্লাব কর্মকাণ্ড গড়ে ওঠে। সেই প্রয়াসের নিবিড় অনুসরণে জন্ম নেয় ‘গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইনস্টিটিউট (১৯৭৩)। বিজ্ঞান ক্লাবের কর্মসূচির অংশ ছিল
এবারে আসা যাক মূল ভাবনার পরিসরে। ২০১০ সাল থেকে আমি ও আমার স্ত্রী (দীপককুমার দাঁ ও রেখা দাঁ) ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ জমিতে [খাঁটুরা প্রীতিলতা শিক্ষা নিকেতন (বালিকা) বিদ্যালয়ের পাশে] গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে সংকল্প রূপায়ণে প্রয়াসী হই। প্রথমে ভাবনা ছিল বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বই ও বিজ্ঞানের পত্রিকা নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থাগার ভাবনা—সংরক্ষণ ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধাসহ ব্যবস্থাদি গড়ে তোলা। এজন্য পাকা গৃহনির্মাণ করা হয় এবং ২১-০২-২০১০ (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে) এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন কার্যকরী করা হয়। এই প্রয়াসের ফলশ্রুতিতে গড়ে ওঠে বাংলা সাহিত্য বিষয়ক (গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, নাটক, সঙ্গীত, শিশু সাহিত্য ইত্যাদি) এক বিশাল ভাণ্ডার, সঙ্গে লিটল ম্যাগাজিনের সম্ভারসহ। প্রাসঙ্গিকভাবে ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, শিক্ষা, রাজনীতি, ব্যবসা বাণিজ্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ক বই, পুস্তিকাও রয়েছে আগ্রহের সুপরিকল্পিত বিন্যাসে।
বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যথার্থ বিকাশে রয়েছে লিট্ল ম্যাগাজিনের সমৃদ্ধ পরিচর্যা। এই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ক্ষুদ্র সংবাদপত্রের (আঞ্চলিক) এক বড়োমাপের সংগ্রহ। বই ও যাবতীয় পত্রিকা স্থান পেয়েছে শতাধিক আলমারির সুসজ্জিত ও পরিচ্ছন্ন ব্যবস্থাবিধির অঙ্গীকারে। আছে বিষয়ের পঞ্জিকরণ (ক্যাটালগিং), কমপিউটার নির্ভর ডকুমেন্টেশন ও ওয়েবসাইট (www.ggparishad.org)। আছে প্রশস্ত পাঠকক্ষ ও আলোচনা কক্ষ (৬০ জন প্রায় বসার জন্য একসঙ্গে)। সমস্ত ব্যবহারবিধি পাঠকের কাছে সহজলভ্য করার লক্ষ্যে তেমন কোন কঠোর বিধিব্যবস্থা এখানে নেই। ইচ্ছামতো ছবি তোলা যায় বা আলমারিতে গিয়ে পছন্দের একাধিক বই/পত্রিকা নিয়ে পড়ার টেবিলে কাজ করা যায়। সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পড়াশুনার জন্য খোলা থাকে গ্রন্থাগার, সপ্তাহে সাতদিন। বলা যায়, বছরের ৩৬৫ দিনই এই গ্রন্থাগার ব্যবহার করা যায়।
যেহেতু সবটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত, তাই এখানে তেমন আনুষ্ঠানিকতা এখনও পর্যন্ত অনুপস্থিত। বহু মানুষের নীরব ও নিঃশর্ত দানে এই গ্রন্থাগার পুষ্টি অর্জন করেছে, একথা সানন্দে ঘোষণা করা যায়। গ্রন্থাগারে বসে পড়া যায়। কিন্তু বই বাড়িতে নেওয়া যায় না (হোম ইস্যু সুবিধা এখানে রাখা হয়নি)। টাকা পয়সার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। গবেষক পড়ুয়ারাই (এমএ পাঠরত ছাত্রছাত্রী, এম ফিল, পিএইচ ডি গবেষক ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-অধ্যাপকমণ্ডলী) এখানে আসেন আপন প্রয়োজনের রসদ আহরণে।
যে ভাবনায় আমরা নিবিষ্ট তা হল গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ-কে একটি বিধিবদ্ধ সোসাইটি-র অধীনে নিবন্ধীকৃত করা এবং গণতান্ত্রিক—সৃজনশীল ও মুক্ত ভাবনার দিশারি একটি সংস্থা হিসাবে ঐতিহ্যের ধারায় গড়ে তোলা। অতি আপনজনের বিশেষ আর্থিক অনুদান (স্বেচ্ছায়) গ্রহণ করা হয় এবং এখনও অবধি সবটাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত। সমমনস্ক বন্ধু-স্বজনের কাছ থেকে আলোচনাক্রমে ও পরামর্শগ্রহণ করে এগোবার চেষ্টায় আমরা ব্রতী আছি। এখনও অবধি এখানে সরকারি আর্থিক সাহায্য লাভের কোন চেষ্টা করা হয়নি। স্বেচ্ছাব্রতী-সহযোগী-সভ্যরা সামান্য সাম্মানিকের পরিবর্তে নানা সহযোগিতায় সর্বদাই দায়বদ্ধ থাকেন। এটাই আমাদের প্রধান ভরসা।
গোবরডাঙা গবেষণা পরিষৎ স্থায়ীভাবে কাজ করবে উপরে উল্লিখিত লক্ষ্যের সার্থক ও সফল রূপায়ণের নিরিখে। বৌদ্ধিক সমাজ বিকাশ হোক জ্ঞানচর্চার অঙ্গীকার। যুক্তিবাদী-বিজ্ঞানমনস্ক ও মানবতাবাদী সমাজমনস্কতা আমাদের অনুসৃত পথের অগ্রসরে মুখ্য প্রেরণা। আমরা নিশ্চিত, আমরা জয়যুক্ত হব।
গ্রন্থাগারটি যথাযথ সক্রিয়তায় গড়ে তোলার প্রয়াসে এখনও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবু আমরা আশাবাদী। গঠনমূলক সক্রিয়তায় আমরা সজাগ থাকায় প্রয়াসী।
Aorem ipsum dolor sit amet, consect teturi elit, sed do eiusmod tempor i cididunt ut e span laboris et dolore ma igna aliqua. Ut enim ad minim, qu is nostrud ulla emco laboris nisi ut aliquip ex.
Vel nibh at velit scelerisque suscipit Lorem ipsum dolor sit amet, consect etuer adipiscing elit Cdui Duis vel nibh at velit scelerisque suscipit.